জ্যোতিষ শাস্ত্রে সুখের মূল্যায়ন চতুর্থ ঘর থেকে করা হয়। চতুর্থ ঘর, ঘরের অধিপতি ও কারক গ্রহের শুভ-অশুভ অবস্থান ও বলাবলের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় যে কোনো জাতক-জাতিকার সুখ-দুঃখের হিসাব।
চতুর্থ ঘরের শুভাশুভ ফলের বিচার
- চতুর্থ ঘর, ঘরের অধিপতি এবং নৈসর্গিক কারক গ্রহ শুভ প্রভাবযুক্ত হয়, তবে উক্ত ঘরের বিষয়গুলির ক্ষেত্রে শুভফল লাভ হয়।
- চতুর্থ ঘর অশুভ প্রভাবযুক্ত, বলাবলহীন হয় বা উক্ত ঘরে কোনো অশুভ গ্রহ অবস্থান করে, তবে বিভিন্ন সমস্যা ও দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়।
চতুর্থ ঘরের বিভিন্ন কারক গ্রহ:
চতুর্থ ঘরের কারক আবার বিভিন্ন বিষয়ের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা গ্রহকে মানা হয়, যেমন:
- মানুষিক সুখ-শান্তি ও মায়ের বিচারে চন্দ্র।
- বিভিন্ন সৌখিন আসবাবপত্র, বাহন ইত্যাদির ক্ষেত্রে শুক্র।
- জমিজমার ক্ষেত্রে মঙ্গল।
এইভাবে বিষয় ভিত্তিক আলাদা আলাদা গ্রহকে চতুর্থ ঘরের কারক মানা হয়।
সুখের বিচারে কালপুরুষের কুণ্ডুলীর মহত্ব
জন্মকুণ্ডলী বিচারে কালপুরুষের কুণ্ডলীর গুরুত্ব অপরিসীম।
- ধনু লগ্ন বা রাশির চতুর্থ বা সুখের ঘরে মীন রাশির অবস্থান। যে মীন রাশি থেকে কালপুরুষের কুণ্ডলীতে ব্যয় বা খরচের বিচার করা হয়।
- কালপুরুষের ব্যয়ের ঘর উক্ত লগ্ন বা রাশির চতুর্থ বা সুখের ঘরে অবস্থান করায়, উক্ত ঘরের বিষয়গুলির জন্য তাদের সর্বদাই একটা ব্যয়াধিক্য থাকে।
- অনেক সময় আয়ের সাথে সঙ্গতি না থাকা ব্যয়ের কারণে তাদের বিভিন্ন সমস্যা বা দুঃখ-কষ্টের সম্মুখীনও হতে হয়।
- পারিবারিক মনমালিন্য বা ঝগড়াঝাঁটি হতে দেখা যায়।
- তাই তারা তাদের চতুর্থ ঘরের বিষয়গুলি থেকে ইতিবাচক (সাকারাত্মক) ফল প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত পথ অনুসরণ করতে হয়।
- সেজন্য তারা চতুর্থ ঘরের মীন রাশির বৈশিষ্ট্যকে অনুসরণ করে শুভফল অর্জন করতে পারেন।
চতুর্থ ঘরের মীন রাশির শুভফল পাওয়ার উপায়
চতুর্থ ঘরের মীন রাশির অধিপতি যেহেতু দেবগুরু বৃহস্পতি, তাই গুরুর আদর্শের সাথে যুক্ত হয়ে চলার মাধ্যমে উক্ত রাশির শুভফল অর্জন করা যায়:
- পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা:
- বাড়িঘর, ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র, যানবাহন, বিভিন্ন যন্ত্রপাতির সাফ-সাফাই করে রাখা।
- শৃঙ্খলা বজায় রাখা:
- দৈনন্দিন কর্মে সঠিক শৃঙ্খলা বজায় রেখে চলা।
- ধর্ম, ন্যায়-নীতির পালন:
- বাড়িঘর বা যানবাহনের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের সাথে সবসময় ন্যায়-নীতির পালন করা।
- এছাড়াও উক্ত ঘরের বৈশিষ্ট্য রক্ষার সঠিক পথ অনুসরণের মাধ্যমেও শুভফল লাভ করা যায়।
চতুর্থ ঘরের বৈশিষ্ট্য রক্ষার পথ
- ভারসাম্য রক্ষা: যেকোনো ঘরের ভারসাম্য নির্ভর করে তার বিপরীত ঘরের সঙ্গে সঠিক সামঞ্জস্য বজায় রাখার ওপর।
- লগ্নের ক্ষেত্রে: লগ্নের বৈশিষ্ট্য রক্ষিত হয় সপ্তম ঘরের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে।
- সপ্তম ঘরের ক্ষেত্রে: সপ্তম ঘরের বৈশিষ্ট্য রক্ষিত হয় লগ্নের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার মাধ্যমে।
- চতুর্থ বা সুখের ঘরের ক্ষেত্রে: চতুর্থ বা সুখের ঘরের ভারসাম্য নির্ভর করে দশম বা কর্মের ঘরের সঙ্গে ভারসাম্য বজায় রাখার ওপর।
- ধনু লগ্ন ও সুখের ঘর: ধনু লগ্ন বা রাশির জাতক-জাতিকারা দশম বা কর্মের ঘরের সঙ্গে সঠিক ভারসাম্য বজায় রেখে তাদের সুখের ঘরের বৈশিষ্ট্যকে রক্ষা এবং বৃদ্ধি করতে পারেন।
- কর্ম ও সুখের সম্পর্ক: কর্মের ঘরের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী কাজ করলে কর্মের উপযুক্ত ফল পাওয়া যায়। আর এই কর্মের উপযুক্ত ফল লাভের মাধ্যমেই সুখের ঘরের সঙ্গে ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হয়।
ধনু লগ্ন ও রাশির দশম বা কর্মের ঘরের রাশি হলো কন্যা রাশি।
- কন্যা রাশি থেকে কালপুরুষের কুণ্ডলীতে ষষ্ঠ ঘরের তথা কালপুরুষের রোগ, ঋণ ও শত্রুর বিচার করা হয়।
- কালপুরুষের কুণ্ডলীতে কন্যা রাশিকে একটি চ্যালেঞ্জিং রাশি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
- কন্যা রাশি থেকে কালপুরুষের দৈনন্দিন কর্মের বিচারও করা হয়।
- দৈনন্দিন কর্মে সঠিক বিচার-বিশ্লেষণ, কঠোর পরিশ্রম ও উপযুক্ত শৃঙ্খলা বজায় রেখে কর্ম করার মাধ্যমে উক্ত রাশির শুভফল লাভ করা যায়।
- নিয়মানুবর্তিতা ও পরিশ্রমবিহীন অবস্থায় উক্ত রাশির শুভফল অর্জন করা যায় না।
মন্ত্র সাধনা ও পূজাপাঠ
ধনু লগ্ন ও রাশির অধিপতি এবং চতুর্থ ঘরের অধিপতি হলেন দেবগুরু বৃহস্পতি।
- উক্ত লগ্ন ও রাশির জাতক-জাতিকারা গুরুর আরাধনা, পূজাপাঠ ও মন্ত্র সাধনার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক লাভ অর্জন করতে পারেন।
- গুরুবারের ব্রত পালন করা শুভ।
- গুরুর বীজমন্ত্র বা অন্যান্য যেকোনো মন্ত্রের প্রতিদিন কমপক্ষে ১০৮ বার জপ করা উচিত।
- ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষ্মীর আরাধনাও শুভফল বৃদ্ধিতে সহায়ক।
উপসংহার
সবশেষে বলা যায় যে, ধনু লগ্ন ও রাশির জাতক-জাতিকার শৃঙ্খলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ধর্মের উপযুক্ত পালনের মধ্যে দিয়ে সুখী জীবন অতিবাহিত করতে পারেন এবং চতুর্থ ঘরের সকল বিষয়ে আনন্দ লাভ করতে পারেন।