জন্ম কুণ্ডুলীর দ্বিতীয় ঘরকে ধন-পরিবার-কুটুম্ব ভাব বলা হয়। অর্থাৎ দ্বিতীয় ঘর থেকে ধন-পরিবার, আত্মীয়-স্বজনের বিচার করা হয়। এছাড়াও দ্বিতীয় ঘর থেকে আমাদের খাওয়া-খাদ্য, বিভিন্ন ধরনের শখ এবং মুখ ও চেহারার বিচারও করা হয়।
দ্বিতীয় ঘরের শুভাশুভ ফলের বিচার
দ্বিতীয় ঘর: ঘরের অধিপতি ও কারক গুরু কুণ্ডুলীতে শুভ অবস্থানে থাকলে জাতক-জাতিকা উক্ত ঘরের বিষয়গুলির ক্ষেত্রে শুভফল লাভ করেন।আর অশুভ অবস্থানে থাকলে শুভফল প্রাপ্তিতে সমস্যা উৎপন্ন হয়। ধন সঞ্চয়ে বাধা, পারিবারিক সমস্যা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সমস্যা উৎপন্ন হয়।
লগ্ন ও সপ্তম ঘরের সম্পর্কের বিশ্লেষণ
জন্ম কুণ্ডুলীর যে কোন একটি ঘরের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকা নির্ভর করে সেই ঘরের বিপরীত ঘরের সাথে উপযুক্ত সামঞ্জস্য বজায় রাখার উদাহরণ হিসাবে লগ্নের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকা নির্ভর করে সপ্তম ঘরের সাথে উপযুক্ত সামঞ্জস্য বজায় রাখার উপর । জন্ম কুণ্ডুলীর লগ্ন হল ব্যক্তি স্বয়ং ।ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও মান-সম্মান লগ্ন থেকে বিচার করা হয়, আর সপ্তম ঘর হল ব্যক্তির বিপরীত ঘর। যে ঘর থেকে জীবনসঙ্গী ও পার্টনারের বিচার করা হয়, সেই সাথে সপ্তম ঘর থেকে আমাদের বিপরীত সেইসব ব্যক্তির বিচার করা হয়, যাদের সাথে আমরা দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন প্রকারের আদান-প্রদান করি।
ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও মান-সম্মান নির্ভর করে জীবনসঙ্গী, পার্টনার বা বিপরীত যে কোন ব্যক্তির সাথে আদান-প্রদানে বা সম্পর্ক স্থাপন বা পালনের সুন্দরতার উপর ও স্বচ্ছতারর। উক্ত ক্ষেত্রগুলিতে যত বেশি সুন্দরতা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে চলা যায়, তত বেশি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বা মান-সম্মান বজায় থাকে বা বৃদ্ধি হয় ।আর যদি সুন্দরতা ও স্বচ্ছতা বজায় না রাখা যায়, তাহলে ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব ও মান-সম্মান সবকিছুই হ্রাস পায়।
অতএব লগ্ন বা রাশির বৈশিষ্ট্য বজায় থাকা বা বৃদ্ধি হওয়া নির্ভর করে সপ্তম ঘরের বিষয়গুলির সাথে উপযুক্ত সম্পর্ক গড়ে তোলার উপর।
লগ্ন ও অষ্টম ঘরের সম্পর্কের বিশ্লেষণ
লগ্ন ও সপ্তম ঘরের মতই দ্বিতীয় বা ধন ও পরিবারের ঘরের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকা নির্ভর করে কুণ্ডুলীর অষ্টম ঘরের সাথে উপযুক্ত সামঞ্জস্য গড়ে তোলার উপর।
আমাদের জন্ম কুণ্ডুলীর দ্বিতীয় ঘর থেকে যেভাবে আমাদের ধন-পরিবারের বিচার করা হয়, তেমনি আমাদের অষ্টম ঘর থেকে আমাদের জীবনসঙ্গী, পার্টনার এবং আমাদের বিপরীত ব্যক্তির ধন-পরিবারের বিচার করা হয়। অর্থাৎ জন্ম কুণ্ডুলীর অষ্টম ঘর হল সপ্তম ঘরের দ্বিতীয় বা ধন-পরিবারের ঘর। আমাদের দ্বিতীয় বা ধন পরিবারের ঘরের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকা নির্ভর করে আমাদের অষ্টম ঘরের সাথে উপযুক্ত সামঞ্জস্য গড়ে তোলার উপর।তথা আমাদের জীবনসঙ্গী, পার্টনার বা বিপরীত ব্যক্তির ধন ও পরিবারের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখার উপর ।
দ্বিতীয় বা ধন-পরিবারের ঘরের শুভফল প্রাপ্তির উপায়
জীবনসঙ্গী, পার্টনার বা বিপরীত ব্যক্তির ধন-পরিবারের বিষয়ে যত বেশি স্বচ্ছতা, সুন্দরতা তথা ধর্ম, ন্যায়-নীতি বজায় রেখে চলা যায়, তত নিজের ধন-পরিবারের স্বচ্ছতা, সুন্দরতা বজায় থাকে।
জীবনসঙ্গী, পার্টনার বা সামনের ব্যক্তির ধন-পরিবারের ব্যাপারে কর্ম করার সময় বা লেনদেন করার সময় ন্যায়-নীতি ও ধর্ম বজায় না রাখলে আমাদের ধন-পরিবার ভালো থাকতে পারে না। ধনের সমস্যা বা পারিবারিক সমস্যা, রোগ-ভোগ ইত্যাদি বিভিন্ন সমস্যা উৎপন্ন হয় ।
দৈনন্দিন জীবনের লেনদেনের ক্ষেত্রে আমাদের সামনের ব্যক্তিকে উপযুক্ত মূল্য প্রদান করা উচিত। যদি না করা হয় আর সেই কারণে সামনের ব্যক্তির পরিবার বা আত্মীয়স্বজন স্বজন দুঃখ-কষ্ট পায়, তাহলে তাদের দুঃখ-কষ্ট পাওয়ার ফল আসে আমাদের ধন-পরিবারে। সেটা যেকোনো রূপে আসতে পারে। দ্বিতীয় ও অষ্টম ঘরের ভারসাম্যের ফলস্বরূপ।
উদাহরণ হিসাবে, কোন ব্যক্তিকে যে কোন প্রকারের কাজে নিয়োগ করলে উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হল কর্তব্য, যাতে সেই ব্যক্তি সেই মূল্য দ্বারা তার পরিবার নিয়ে সুখ-শান্তিতে খেতে পারে, চলতে পারে। কিন্তু যদি উপযুক্ত মূল্য না দেওয়া হয়, তাহলে সেই ব্যক্তির পারিবারিক বিষয়গুলিতে বিঘ্ন সেই ব্যক্তির পরিবারে সমস্যা হাজির হবে। ফলস্বরূপ, পারিশ্রমিক না দেওয়া ব্যক্তির পরিবারেও সমস্যা উৎপন্ন হবে।আর্থিক বা পারিবারিক সমস্যা দেখা দেবে যে কোন রূপে বা যে কোন ভাবে। দ্বিতীয় ও অষ্টম ঘরের ভারসাম্যের নিয়ম অনুযায়ী।
আমরা যদি ন্যায়-নীতি ও ধর্মের মধ্যে দিয়ে দৈনন্দিন জীবনের কর্ম করি, লেনদেন করি, তাহলে ধন বা পারিবারিক সবক্ষেত্রেই সুখী হতে পারি। অপরের সাথে লেনদেনে উপযুক্ত মূল্য দিলে আমরাও উপযুক্ত মূল্য পেতে পারি। ফলস্বরূপ আমাদের পরিবার এবং আমাদের সামনের ব্যক্তির পরিবার সকলেই সুখী হতে পারি ।
উপসংহার
অতএব, ধন ও পারিবারিক সুখের জন্য সর্বদা ন্যায়-নীতি ও ধর্ম বজায় রেখে কর্ম করা উচিত। দৈনন্দিন জীবনের আদান-প্রদানে স্বচ্ছতা বজায় রাখা উচিত।তাতে ধন ও পারিবারিক বিষয়ে সুখ-শান্তি বজায় থাকে এবং বৃদ্ধিও হয়।