- জ্যোতিষ শাস্ত্রে দাম্পত্য সুখের বিচার জন্ম কুণ্ডুলীর সপ্তম ঘর থেকে করা হয়।
- সপ্তম ঘর,ঘরের অধিপতি এবং বিবাহ কারক গ্রহের শুভাশুভ অবস্থান ও বলাবলের উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয় বিবাহিত জীবনের সুখ ও শান্তি।
- পুরুষদের ক্ষেত্রে শুক্র এবং স্ত্রীদের ক্ষেত্রে গুরুকে বিবাহের নৈসর্গিক কারক হিসাবে মানা হয়।
- অনেকে মঙ্গলকেও স্ত্রীদের ক্ষেত্রে দাম্পত্য সুখের কারক হিসাবে মানেন।
সুখী বিবাহিত জীবনের মাপকাঠি
- শুভফল
- সপ্তম ঘর,অধিপতি ও বিবাহ কারক কুণ্ডুলীতে শুভভাবে অবস্থান।
- শুভ গ্রহের দ্বারা প্রভাবযুক্ত।
- বলাবলযুক্ত ।
- সপ্তম ঘরে শুভ গ্রহের অবস্থান।
- অশুভ ফল
- অশুভভাবে অবস্থান।
- অশুভ গ্রহের দ্বারা প্রভাব যুক্ত।
- বলাবলহীন।
- সপ্তম ঘরে কোন অশুভ গ্রহের অবস্থান।
- সপ্তম ঘর বা ঘরের অধিপতি ও কারক নীচ রাশিতে অবস্থান করলে,দুই বা ততোধিক অশুভ গ্রহ দ্বারা পীড়িত হলে অনেক ক্ষেত্রে ডিভোর্সের মত অবস্থাও তৈরি হয়।
দাম্পত্য সুখের বিচারে নবাংশ কুণ্ডুলীর অধ্যায়নও অতি আবশ্যক।
কালপুরুষের কুণ্ডুলীতে ধনু লগ্ন ও রাশির বিচার
- ধনু লগ্ন বা রাশি হল কালপুরুষের ভাগ্যস্থানের রাশি।
- কালপুরুষের ভাগ্যস্থান নিয়ে জন্ম হওয়ায় উক্ত জাতক-জাতিকারা ধর্মজ্ঞান,উচ্চশিক্ষার প্রতি আগ্রহী হন।
- লগ্ন-রাশি বা লগ্ন-রাশি সুপ্রভাব যুক্ত হলে উক্ত জাতক-জাতিকারা যথেষ্ট উচ্চশিক্ষিতও হন।
- দেবগুরু বৃহস্পতি পাপ প্রভাবযুক্ত বা অশুভ গ্রহের দ্বারা পীড়িত বা কোন অশুভ ঘরের সাথে সম্পর্কযুক্ত হলে জাতক-জাতিকার মধ্যে উপরিউক্ত গুণাবলীগুলি কম পরিলক্ষিত হয়।
- তবে কালপুরুষের নবম ভাবের বা গুরুর বৈশিষ্ট্য কম বেশি অবশ্যই থাকে ।
কালপুরুষের কুণ্ডলীতে ধনু লগ্ন ও রাশির সপ্তম ঘরের বিচার: দাম্পত্য জীবনে মিথুন রাশির প্রভাব
- ধনু লগ্ন ও রাশির সপ্তম ঘরের রাশি হল মিথুন রাশি, যার অধিপতি বুধ গ্রহ।
- কালপুরুষের কুণ্ডলী অনুযায়ী, মিথুন রাশি হল কালপুরুষের তৃতীয় ঘরের রাশি, যা সাহস-পরাক্রম, ছোট ভাই-বোন, পাড়া-পড়শী এবং লেখনী কার্য্য বা যোগাযোগের বিচার করে।
দাম্পত্য জীবনে মিথুন রাশির বৈশিষ্ট্যগুলি সঠিকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে ধনু লগ্ন বা রাশির জাতক-জাতিকারা সুখী হতে পারেন:
- যোগাযোগের গুরুত্ব:
- মিথুন রাশি যেহেতু যোগাযোগের কারক, তাই দাম্পত্য জীবনে খোলামেলা এবং স্বচ্ছ যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
- জীবনসঙ্গীর সাথে নিয়মিত কথোপকথন, মনের ভাব আদান-প্রদান এবং একে অপরের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা সম্পর্ককে মজবুত করে।
- যেকোনো ভুল বোঝাবুঝি বা সমস্যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার প্রবণতা দাম্পত্য সুখ বৃদ্ধি করে।
- মানসিক শ্রম ও বোঝাপড়া:
- মিথুন রাশি বুদ্ধিমত্তা এবং মানসিক তৎপরতার প্রতীক। তাই দাম্পত্য জীবনে শুধু শারীরিক নয়, মানসিক শ্রম এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বোঝাপড়াও জরুরি।
- জীবনসঙ্গীর চিন্তাভাবনা, আগ্রহ এবং মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া মিথুন রাশির ইতিবাচক প্রভাবকে বাড়িয়ে তোলে।
- পরিবর্তনশীলতা ও নমনীয়তা:
- মিথুন রাশি দ্বৈত স্বভাবের এবং পরিবর্তনশীল। দাম্পত্য জীবনে নমনীয়তা এবং নতুন পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে চলার ক্ষমতা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
- একঘেয়েমি দূর করতে এবং সম্পর্কে সতেজতা বজায় রাখতে নতুন কিছু করার চেষ্টা বা জীবনসঙ্গীর পরিবর্তনশীল মেজাজকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
- সাহস ও পরিশ্রম:
- মিথুন রাশি থেকে কালপুরুষের সাহস-পরাক্রম বা পরিশ্রমের বিচার করা হয়।
- তাই বিবাহিত জীবনের সুন্দরতা বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট শ্রম (শারীরিক বা মানসিক) করতে হয়।
- এই শ্রমের মাধ্যমে এবং জীবনসঙ্গীর সহায়তায় ধনু লগ্ন বা রাশির জাতক-জাতিকারা তাদের ভাগ্যের আমূল পরিবর্তন ঘটাতে পারেন।
জ্যোতিষে ঘরের ভারসাম্য: সম্পর্ক ও সমৃদ্ধি
জ্যোতিষশাস্ত্রে জন্ম কুণ্ডলীর প্রতিটি ঘরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে। তবে, এই ঘরগুলির শুভ ফল লাভ এবং তাদের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে:
- বিপরীত ঘরের সাথে ভারসাম্য:
- প্রতিটি ঘরের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখা নির্ভর করে তার বিপরীত ঘরের সাথে সঠিক ভারসাম্য বা 'ব্যালেন্স' স্থাপন করার উপর।
- দাম্পত্য জীবনে ভারসাম্য:
- লগ্ন (প্রথম ঘর) আমাদের ব্যক্তিত্ব, শরীর এবং সামগ্রিক অস্তিত্বকে বোঝায়।
- সপ্তম ঘর আমাদের জীবনসঙ্গী, অংশীদার এবং বাইরের জগতের সাথে আমাদের সম্পর্ককে প্রতিনিধিত্ব করে।
- লগ্ন এবং সপ্তম ঘর একে অপরের ঠিক বিপরীতে অবস্থান করে এবং পরস্পরের পরিপূরক।
- লগ্নের শুভ ফল এবং শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার জন্য সপ্তম ঘরের সাথে তার ভারসাম্য অপরিহার্য।
- একইভাবে, একটি সুখী দাম্পত্য জীবন বা সফল অংশীদারিত্বের জন্য সপ্তম ঘরের বৈশিষ্ট্যকে শক্তিশালী করতে হলে লগ্নের সাথে তার সঠিক ভারসাম্য স্থাপন জরুরি।
- ফলাফল:
- এই দুটি ঘরের মধ্যে সুষ্ঠু বোঝাপড়া এবং ভারসাম্যের মাধ্যমেই জীবনে আসে সুন্দরতা, সখ্যতা এবং সামগ্রিক সমৃদ্ধি।
- এই ভারসাম্য শুধু বিদ্যমান বৈশিষ্ট্যগুলোকেই সুরক্ষিত রাখে না, বরং সেগুলির বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।
সুখী দাম্পত্য জীবনের উপায়:
- ধনু লগ্নের জাতক-জাতিকা সপ্তম ঘরের মিথুন রাশির বৈশিষ্ট্যের সাথে সঠিক ভারসাম্য গড়ে বিবাহিত জীবন সুন্দর করতে পারেন।
- লগ্নের বৈশিষ্ট্যের বৃদ্ধি সম্ভব।
- সপ্তম ঘরের করণীয় কর্মকে প্রাধান্য দিয়ে বিবাহের সুন্দরতা বজায় রাখতে হয়।
- মাধুর্য বজায় রাখতে শারীরিক বা মানসিক শ্রম প্রয়োজন।
- জীবনসঙ্গীর সহায়তায় সপ্তম ঘরের শ্রমে ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব।
- ভাগ্য উন্নতি সপ্তম ঘরের ভারসাম্য ও জীবনসঙ্গীর সহযোগিতায় নির্ভরশীল।
দাম্পত্য সুখে দেবগুরু বৃহস্পতির গুরুত্ব:
- ধনু লগ্নের জাতক-জাতিকা লগ্নের অধিপতির বৈশিষ্ট্যকে পাথেয় করে বিবাহ পরিচালনা করলে শুভ ফল।
- সপ্তম ঘরের কর্মে শৃঙ্খলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, ন্যায়-নীতি ও ধর্ম প্রাধান্য দিলে গুরুর আশীর্বাদ লাভ।
- এই পদ্ধতিতে বিবাহিত জীবন মসৃণ ও সুন্দর চলে।
ধ্যান, পূজা ও মন্ত্রচর্চা
- লগ্ন ও রাশির অধিপতি তথা দেবগুরু বৃহস্পতির পূজা ও মন্ত্রপাঠের মধ্যে দিয়ে শুভফল লাভ করা যায়।
- গুরুর বীজমন্ত্র বা যে কোন মন্ত্রের 108 বার জপ শুভফল লাভে ফলদায়ক।
- গুরুবারের ব্রত পালন এবং ভগবান বিষ্ণু ও মা লক্ষীর পূজাপাঠ ও আরাধনা শুভফল বৃদ্ধিতে সহায়ক।
উপসংহার
- অতএব ধনু লগ্ন বা রাশির জাতক-জাতিকারা বিবাহিত জীবন পরিচালনায় দেবগুরু বৃহস্পতির আদর্শ ও সপ্তম ঘরের করণীয় কর্মকে গুরুত্ব দিয়ে চলুন।
- আপনার বিবাহিত জীবন চলবে সুন্দরতার মধ্যে দিয়ে এবং জীবনসঙ্গীর সহায়তায ভাগ্যের হবে বৃদ্ধি। আপনাদের স্বপ্ন পাবে বাস্তবের রূপ ।
আরো পড়ুন