ধন আগমনের সময়কাল।

Astrobless
By -

বর্তমানে আমাদের জীবনে ধন-সম্পদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ছাড়া সমাজে টিকে থাকা বা সুখ-সুবিধা ভোগ করা প্রায় অসম্ভব। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, ধন লাভের নির্দিষ্ট কিছু সময়কাল রয়েছে, যা জন্মকুণ্ডলী বিশ্লেষণ করে জানা যায়।

জ্যোতিষশাস্ত্রে ধন লাভের সূত্র

  • বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্র শুধুমাত্র ধন লাভের শুভ সময় নির্ধারণ করে না, বরং এটি জন্মকুণ্ডলী, নবাংশ কুণ্ডলী এবং গোচর বিশ্লেষণ করে ব্যক্তির কর্মজীবনের সঠিক দিকনির্দেশনাও প্রদান করে।
  • এই সূত্রগুলো পরাশর হোরা শাস্ত্র থেকে এসেছে, যা হাজার হাজার বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
  • এটি ব্যবসা, বিনিয়োগ এবং আর্থিক পরিকল্পনাকে আরও সুসংহত করতে সাহায্য করে।

ধন বিচারের ভিত্তি: অর্থ ত্রিকোণ

  • জ্যোতিষশাস্ত্রে ধন বিচার করা হয় জন্মকুণ্ডলীর অর্থ ত্রিকোণ ভাব থেকে।
  • কুণ্ডলীর দ্বিতীয়, ষষ্ঠ ও দশম ঘরকে অর্থ ত্রিকোণ ভাব বলা হয়।
  • এই ভাবগুলির অধিপতির দশা-অন্তর্দশার সঙ্গে অন্যান্য শুভ ভাবের অধিপতির দশা-অন্তর্দশায় ধন লাভ হয়।

Time period of wealth arrival.

পরাশরী সূত্র

পরাশর হোরা শাস্ত্রের সূত্র অনুযায়ী:

  • জন্মকুণ্ডলীর দ্বিতীয় ও একাদশ ভাবের অধিপতি নবাংশ কুণ্ডলীতে যে ঘরে থাকে, সেই ঘরের ত্রিকোণ ভাবের ওপর দিয়ে গোচরকালীন গুরু যখন অতিক্রম করেন, তখন ধন লাভ হয়।
  • একইভাবে, সেই ঘরের রাশি অধিপতি জন্মকুণ্ডলীতে যে ডিগ্রিতে অবস্থান করে, সেই ডিগ্রির কাছে দিয়ে যখন গুরু অতিক্রম করেন, তখন ধনের আগমন হয়।

দ্বিতীয় ও একাদশ ভাব: ধন লাভের ভিত্তি

জ্যোতিষশাস্ত্রে এই দুটি ভাবকে ধন লাভের মূল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়।

দ্বিতীয় ভাব (ধন ভাব)

  • এটি শুধুমাত্র সঞ্চিত সম্পদ নয়, বরং আর্থিক স্থিতিশীলতা, সঞ্চয়ের ক্ষমতা এবং অর্থের প্রতি মানসিক দৃষ্টিভঙ্গিও নির্দেশ করে।
  • পারিবারিক সম্পত্তি এবং মূল্যবান জিনিসপত্র এই ভাব থেকে বিচার করা হয়।
  • দ্বিতীয় ভাবের অধিপতি গ্রহ শুভ স্থানে অবস্থান করলে ব্যক্তির সম্পদ বৃদ্ধি পায়।

একাদশ ভাব (লাভ ভাব)

  • এটি আয়ের প্রধান উৎস নির্দেশ করে, বিশেষত কর্মজীবন, ব্যবসা বা পেশাগত নেটওয়ার্কিংয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত লাভ।
  • সামাজিক সংযোগ এবং বড় ভাইবোনদের কাছ থেকে প্রাপ্ত সাহায্যও এই ভাব থেকে বিচার করা হয়।

বিভিন্ন লগ্নে আর্থিক সম্ভাবনা

  • মেষ লগ্ন: দ্বিতীয় ঘরের অধিপতি শুক্র এবং একাদশ ঘরের অধিপতি শনি।
  •  তুলা লগ্ন: দ্বিতীয় ঘরের অধিপতি মঙ্গল এবং একাদশ ঘরের অধিপতি সূর্য।
  • মিথুন লগ্ন: চন্দ্র (দ্বিতীয়) যদি জল রাশিতে থাকে, তাহলে তরল সম্পদ থেকে আয় বাড়ে। মঙ্গল (একাদশ) যদি প্রযুক্তির রাশিতে থাকে, তাহলে প্রযুক্তি বা নির্মাণ থেকে লাভ হতে পারে।

নবাংশ কুণ্ডলী: সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ

  • নবাংশ কুণ্ডলী জন্মকুণ্ডলীর গ্রহদের শক্তি ও সুপ্ত সম্ভাবনা প্রকাশ করে।
  • ধন লাভের ক্ষেত্রে, নবাংশে দ্বিতীয় ও একাদশ ভাবের অধিপতির অবস্থান জন্মকুণ্ডলীর চেয়েও বেশি নির্ভুল ফল দেয়।
  • যদি এই গ্রহগুলো শুভ রাশিতে থাকে, তবে ধন লাভের সম্ভাবনা বহুগুণে বেড়ে যায়।

উদাহরণ:

  • যদি মেষ লগ্নের জাতকের শুক্র নবাংশ কুণ্ডলীতে কুম্ভ রাশিতে এবং শনি মকর রাশিতে থাকে, তাহলে গোচরকালীন গুরু যখন মকর ও কুম্ভ রাশি এবং তাদের ত্রিকোণ ভাবের (বৃষ, কন্যা, মিথুন, তুলা ) রাশির ওপর দিয়ে গোচর করবেন, তখন ব্যক্তি ধন লাভ করবেন।
  • তুলা লগ্ন: দ্বিতীয় ভাবের অধিপতি মঙ্গলের নবাংশ মীনে এবং একাদশ ভাবের অধিপতি সূর্যের নবাংশ বৃশ্চিকে থাকলে নির্মাণ, প্রযুক্তি বা নেতৃত্বে লাভ হতে পারে।

গোচরকালীন গুরু: সময় নির্ধারক

  • জ্যোতিষশাস্ত্রে বৃহস্পতি বা গুরু সৌভাগ্য ও সম্পদের কারক গ্রহ হিসেবে বিবেচিত।
  • গুরুর গোচরকালে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।

সূত্রের প্রয়োগ:

  • যখন গুরু জন্মকুণ্ডলীতে দ্বিতীয় বা একাদশ ভাবের অধিপতির নবাংশে বা তার ত্রিকোণ (পঞ্চম ও নবম) রাশিতে গোচর করে, তখন আর্থিক বৃদ্ধি ও নতুন আয়ের উৎস তৈরি হয়।
  • গুরু প্রায় এক বছর একটি রাশিতে গোচর করেন। এই সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট কোন সময় ধন প্রাপ্তি হবে, তা নির্ভর করে জন্মকুণ্ডলীতে গ্রহের ডিগ্রির উপর। যেমন: যদি শনি ১০ ডিগ্রিতে থাকে, তাহলে গুরুর গোচরকালে ৫ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে ধন লাভ হতে পারে।

প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা

  • ধন লাভের মাত্রা নির্ভর করে কুণ্ডলীতে গ্রহের শুভ বা অশুভ প্রভাবের উপর। শুভ ফল বৃদ্ধির জন্য কিছু প্রতিকার অনুসরণ করা যেতে পারে:
  • গুরুর আদর্শ: কর্মক্ষেত্রে ন্যায়, নীতি ও ধর্ম পালন, গুরুর পূজাপাঠ ও মন্ত্র সাধনা শুভ ফল লাভে সহায়ক।
  • লক্ষ্মী-নারায়ণের পূজা: মা লক্ষ্মী ও নারায়ণের পূজা পাঠও শুভ ফল বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।
  • গ্রহের মন্ত্র: নিজ নিজ দ্বিতীয় ও একাদশ ঘরের অধিপতির পূজা ও মন্ত্র উচ্চারণও শুভফল বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

উপসংহার

  • এই সূত্রের মূল কথা হলো, জন্মকুণ্ডলীর দ্বিতীয় ও একাদশ ভাবের অধিপতির অবস্থান এবং নবাংশে তাদের শক্তি বিচার করে ধন লাভের সম্ভাবনা বোঝা যায়।
  • এর সঙ্গে যখন গোচরকালীন গুরুর শুভ দৃষ্টি বা অবস্থান যুক্ত হয়, তখন সম্পদ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়।
  • তবে, মনে রাখা প্রয়োজন, এই প্রতিকারগুলো কেবল গ্রহের অশুভ প্রভাব কমাতে সাহায্য করে।
  • প্রকৃত ফল পাওয়ার জন্য সৎ কর্ম, কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক পরিকল্পনা অপরিহার্য।
একজন অভিজ্ঞ জ্যোতিষীর পরামর্শ নিয়ে আপনার কুণ্ডলী বিশ্লেষণ করুন এবং জীবনের সঠিক সময়ে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিন।

জন্ম কুণ্ডুলীর বিষয়ে জানতে আরোও পড়ুন