- ভূমিকা:
- জ্যোতিষশাস্ত্রে কেতু এমন একটি নাম যা প্রায়শই ভয়ের বাতাবরণ তৈরি করলেও, এটি আধ্যাত্মিকতা ও মোক্ষের এক গুরুত্বপূর্ণ কারক।
- সৌরজগতে এর কোনো ভৌত অস্তিত্ব না থাকলেও, বৈদিক জ্যোতিষশাস্ত্রে রাহু ও কেতুকে ছায়া গ্রহের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
- পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে এদের সৃষ্টি এবং এর প্রভাবে আজও সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ ঘটে।
- আধুনিক বিজ্ঞানেও এই প্রভাবকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হয়।
রাহু-কেতুর সৃষ্টির পৌরাণিক বর্ণনা:
- ভগবান বিষ্ণু যখন দেবতাদের মধ্যে অমৃত বিতরণ করছিলেন, তখন স্বরভানু নামের এক রাক্ষস দেবতা সেজে অমৃত পান করেন।
- চন্দ্র ও সূর্যদেব এই কথা ভগবান বিষ্ণুকে জানালে তিনি সুদর্শন চক্রের মাধ্যমে স্বরভানুর গলা কেটে দেন।
- গলা কাটার আগেই অমৃত পান করায় স্বরভানু অমর হয়ে যান এবং তার শরীর দুই টুকরোতে বিভক্ত হয়।
- মাথা থেকে গলা পর্যন্ত অংশ রাহু এবং গলা থেকে পা পর্যন্ত অংশ কেতু নামে পরিচিত হয়।
- চন্দ্র ও সূর্যদেবের জানানোর কারণে এই ঘটনা ঘটায়, স্বরভানু প্রতিজ্ঞা করেন যে সুযোগ পেলেই সূর্য ও চন্দ্রের গায়ে গ্রহণ লাগাবেন, যা আজও চলছে।
রাহু-কেতুর অস্তিত্বের বর্ণনা ও জ্যোতিষশাস্ত্রীয় অবস্থান:
- কুণ্ডলী চক্রে রাহু-কেতুর নিজস্ব কোনো ঘর নেই।
- রাহুকে কুম্ভ রাশির সহ-অধিপতি এবং কেতুকে বৃশ্চিক রাশির সহ-অধিপতি হিসেবে দেখা হয়।
- কেতুর উচ্চস্থ ঘর নিয়ে বিভিন্ন মত প্রচলিত আছে: অনেকে বৃশ্চিক রাশিকে, আবার অনেকে ধনু রাশিকে কেতুর উচ্চস্থ ঘর মানেন। (রাহুর উচ্চস্থ ঘর নিয়েও বিভিন্ন মত, যেমন বৃষ বা মিথুন)।
- সূর্য ও চন্দ্র যখন রাহু বা কেতুর একদম কাছাকাছি ডিগ্রিতে আসে, তখনই সূর্যগ্রহণ বা চন্দ্রগ্রহণ হয়।
- আধ্যাত্মিকতার সাথে যুক্তি:
- জ্যোতিষশাস্ত্রে কেতুকে আধ্যাত্মিকতা ও মোক্ষের কারক গ্রহ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
- কেতুর শুভফল পেতে আধ্যাত্মিক জীবনযাপন অপরিহার্য।
শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতা:
- দৈনন্দিন জীবনে শৃঙ্খলা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা উচিত।
- শৃঙ্খলিত জীবনযাপন কেতুর ইতিবাচক প্রভাব বাড়ায়।
- ধর্ম ও ন্যায়-নীতি:
- ধর্মীয় অনুশাসন ও ন্যায়-নীতির কঠোর পালন করা জরুরি।
- নৈতিকতার সাথে জীবন পরিচালনা কেতুর শুভফল প্রাপ্তির মূল চাবিকাঠি।
- ঈশ্বরের সাথে সংযোগ:
- কেতু ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
উপরোক্ত বিষয়গুলি পালনের মাধ্যমে কেতুর সাথে যুক্ত হয়ে মোক্ষের পথে অগ্রসর হওয়া সম্ভব।
লগ্ন ও রাশিতে কেতুর শুভফল লাভের মৌলিক উপায়:
- আধ্যাত্মিকতার পথে অগ্রসরণ:
- লগ্ন বা রাশিতে কেতু থাকলে আধ্যাত্মিক জীবনযাপনের মাধ্যমে শুভফল লাভ সম্ভব।
- কেতুর আধ্যাত্মিক গুণাবলী অনুসরণ করে জীবনকে ঈশ্বরমুখী করা।
- সপ্তম ঘরের প্রভাব:
- লগ্নে কেতুর সপ্তম দৃষ্টি সপ্তম ঘরে পড়ে, তাই এই ঘরের কর্মে কেতুর বৈশিষ্ট্য পালন জরুরি।
- সপ্তম ঘর বিবাহিত জীবন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পার্টনারশিপের বিচার করে।
- শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা:
- বিবাহিত জীবনে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা উচিত।
- ধর্ম ও ন্যায়-নীতির কঠোর পালন কেতুর শুভফলকে প্রস্ফুটিত করে।
- জীবনসঙ্গী ও পার্টনারের সাথে সম্পর্ক:
- জীবনসঙ্গী, পার্টনার বা বিপরীত ব্যক্তির সাথে ধর্মীয় ও নৈতিক আচরণ বজায় রাখা।
- সৎ ও ন্যায়সঙ্গত সম্পর্ক গড়ে তোলা কেতুর ইতিবাচক ফল প্রাপ্তির মূল চাবিকাঠি।
- ফলাফল:
- এই নীতিগুলি মেনে চললে কেতুর মাধ্যমে আধ্যাত্মিক উন্নতি, জীবনের স্থিতিশীলতা ও সুখ-সমৃদ্ধি লাভ হয়।
- কেতুর অশুভ প্রভাব কমাতে ও শুভফল প্রাপ্তির জন্য:
- খাদ্যাভ্যাস:
- আমিষ জাতীয় খাবার যত সম্ভব কম খাওয়া বা ত্যাগ করা।
- নেশা জাতীয় খাবার বা পানীয় থেকে দূরে থাকা।
- মন্ত্র পাঠ:
- কেতুর বীজ মন্ত্র: ওঁ স্ত্রাং স্ত্রীং স্ত্রৌং সঃ কেতবে নমঃ (নিয়মিত জপ করা)।
- অন্যান্য কেতু সম্পর্কিত মন্ত্র পাঠ করা।
- আরাধনা:
- ভগবান গণেশের নিয়মিত পূজা ও আরাধনা করা।
- ফলাফল:
- বিবাহিত জীবনে ও ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যা হ্রাস পায়।
- কেতুর অশুভ প্রভাব কমে শুভফল প্রাপ্তি হয়।
- উপসংহার:
- সবশেষে বল যায় যে, লগ্ন/রাশিতে কেতু অবস্থানকারী জাতক-জাতিকারা আধ্যাত্মিকতা তথা কর্মক্ষেত্রে ধর্ম ও ন্যায়-নীতি পালনের মাধ্যমে কেতুর শুভফল অর্জন করতে পারেন।
আরো জানুন