বৃষ লগ্ন ও রাশির বিবাহিত জীবনের সমস্যা ও সমাধান।

Astrobless
By -

বৃষ লগ্নের জাতক-জাতিকার দাম্পত্য জীবন জ্যোতিষশাস্ত্রে এক বিশেষ আলোচনার বিষয়। এর মূল কারণ হলো, তাদের সপ্তম ঘর বা বিবাহ স্থান হলো বৃশ্চিক রাশি। এই সংমিশ্রণটি সম্পর্কের মধ্যে গভীর আবেগ, তীব্র আকর্ষণ, এবং একই সাথে কিছু সূক্ষ্ম চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসে।

​সপ্তম ঘরের গুরুত্ব ও বৃষ-বৃশ্চিক যোগের বিশেষত্ব

  • সপ্তম ঘর: জ্যোতিষশাস্ত্রে এটি বিবাহ, প্রেম এবং ব্যবসায়িক অংশীদারিত্বের মতো সম্পর্কের সূচক।
  • শুভ প্রভাব: যদি সপ্তম ঘর বা এর অধিপতি শুভ অবস্থানে থাকে, তবে দাম্পত্য জীবন সুখী ও শান্তিপূর্ণ হয়।
  • অশুভ প্রভাব: অশুভ গ্রহের প্রভাবে মনোমালিন্য, অবিশ্বাস, বা বিচ্ছেদের মতো সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
  • বৃশ্চিক রাশির প্রভাব: বৃষ লগ্নের সপ্তম ঘরে বৃশ্চিক রাশি সম্পর্কের মধ্যে তীব্রতা ও গভীরতা নিয়ে আসে। এটি আবেগ, রহস্য এবং একনিষ্ঠতার প্রতীক।
  • স্থির রাশির সমস্যা: বৃষ এবং বৃশ্চিক উভয়ই স্থির রাশি। এর ফলে একগুঁয়েমি, জেদ বা ক্ষমতার লড়াইয়ের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

​বিবাহ কারক গ্রহ ও তাদের প্রভাব

  • পুরুষদের জন্য:
  • শুক্র: এটি বিবাহের প্রধান কারক গ্রহ। শুভ শুক্র একজন সুশীল ও ভাগ্যবতী স্ত্রী এনে দেয়।
  • অশুভ শুক্র: এর অশুভ অবস্থান দাম্পত্য জীবনে অসন্তোষ সৃষ্টি করতে পারে।
  • নারীদের জন্য:
  • গুরু (বৃহস্পতি): এটি বিবাহের প্রধান কারক গ্রহ। এর প্রভাবে একজন জ্ঞানী ও ধার্মিক স্বামী পাওয়া যায়।
  • মঙ্গল: এটি শারীরিক আকর্ষণ ও প্যাশন নির্দেশ করে। তবে অশুভ হলে সংঘর্ষের কারণ হয়।

  • গ্রহের অবস্থান: যখন এই গ্রহগুলো শুভ অবস্থানে থাকে, তখন একটি সুখী ও দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
The Problems and Solutions of Married Life for Taurus Ascendant and Sign.

বৃশ্চিক রাশির প্রকৃতি এবং আধুনিক জীবনের চ্যালেঞ্জ

  • শুভ প্রভাব: যখন শুক্র ও মঙ্গল উভয়ই শুভ অবস্থানে থাকে, তখন সম্পর্কটি অত্যন্ত আবেগপূর্ণ ও প্রাণবন্ত হয়।
  • অশুভ প্রভাব: যদি এই গ্রহগুলো দুর্বল হয়, তবে মতবিরোধ, শারীরিক বা মানসিক সংঘর্ষ এবং ভুল বোঝাবুঝি প্রায়শই দেখা যায়।
  • আধুনিক চ্যালেঞ্জ: কর্মজীবনের চাপ, সময়ের অভাব এবং সামাজিক মাধ্যমে অতিরিক্ত সময় কাটানোর কারণে সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়।

​শুভ ফল লাভের উপায় ও প্রতিকার

  • সচেতনতা ও শৃঙ্খলা:
  • খোলামেলা যোগাযোগ: নিয়মিতভাবে সঙ্গীর সঙ্গে মন খুলে কথা বলা জরুরি।
  • যৌথ বিনোদন: একসঙ্গে ভ্রমণ বা যেকোনো শখ সম্পর্ককে সতেজ রাখে।
  • আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় পথ:
  • নিয়মিত অনুশীলন: ধর্মীয় অনুশীলন মানসিক শান্তি আনে।
  • নৈতিকতা: সম্পর্কের তীব্রতাকে ইতিবাচক দিকে প্রবাহিত করার জন্য নৈতিকতা বজায় রাখুন।

​পূজা ও মন্ত্র সাধনা

  • শুক্রের মন্ত্র: "ওঁ দ্রাং দ্রীং দ্রৌং সঃ শুক্রায় নমঃ" (প্রতিদিন ১০৮ বার জপ)।
  • মঙ্গলের মন্ত্র: "ওঁ ক্রাং ক্রীং ক্রৌং সঃ ভৌমায় নমঃ" (প্রতিদিন ১০৮ বার জপ)।
  • অন্যান্য পূজা: মা লক্ষ্মী, দুর্গা, এবং বজরঙ্গবলী-র নিয়মিত পূজা করাও শুভ ফল দেয়।

​অশুভ ফলের সম্ভাবনা ও প্রতিকার

​যদি সপ্তম ঘর অশুভ গ্রহ দ্বারা পীড়িত হয়, তবে সম্পর্কের মধ্যে জটিলতা দেখা দিতে পারে।

  • শনির প্রভাব: সম্পর্কের মধ্যে শীতলতা, দূরত্ব এবং একঘেয়েমি সৃষ্টি করে।
  • রাহুর প্রভাব: ভুল বোঝাবুঝি, সন্দেহ, এবং তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের কারণ হয়।
  • কেতুর প্রভাব: আকস্মিক বিচ্ছিন্নতা বা সম্পর্কের প্রতি উদাসীনতা নিয়ে আসে।

প্রতিকার:

  • অশুভ গ্রহের মন্ত্র জপ:
  • ​শনির মন্ত্র: "ওঁ শং শানৈশ্চরায় নমঃ"।
  • ​রাহুর মন্ত্র: "ওঁ রাং রাহবে নমঃ"।
  • ​কেতুর মন্ত্র: "ওঁ কেং কেতবে নমঃ"।
  • রত্ন ধারণ: একজন অভিজ্ঞ জ্যোতিষীর পরামর্শে হীরা বা প্রবাল ধারণ করা যেতে পারে।
  • দান: দরিদ্রদের সাহায্য করা এবং বয়স্কদের সম্মান করাও একটি কার্যকর প্রতিকার।

​উপসংহার

​বৃষ লগ্নের জাতক-জাতিকাদের দাম্পত্য জীবনে বৃশ্চিক রাশির প্রভাব একদিকে যেমন গভীর আবেগ ও একনিষ্ঠতা নিয়ে আসে, তেমনি এটি সম্পর্কের মধ্যে কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি করে। তবে, সচেতনতা, পারস্পরিক সম্মান, ধৈর্য, এবং জ্যোতিষশাস্ত্রের সঠিক প্রতিকার মেনে চললে এই চ্যালেঞ্জগুলো সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব।

​পাঠকদের জন্য প্রশ্ন

  • ​জ্যোতিষশাস্ত্রে বিবাহিত জীবনের সুখের জন্য সপ্তম ঘরের পাশাপাশি আর কোন কোন বিষয় বিবেচনা করা হয়?
  • ​বৃষ লগ্নের জন্য সপ্তম ঘরে বৃশ্চিক রাশির অবস্থান কেন সম্পর্কের ক্ষেত্রে আকর্ষণ ও চ্যালেঞ্জ উভয়ই তৈরি করে?
  • ​নিবন্ধ অনুযায়ী, পুরুষদের ও নারীদের জন্য দাম্পত্য জীবনের কারক গ্রহ হিসেবে কোন কোন গ্রহকে বিবেচনা করা হয়?
  • ​দাম্পত্য জীবনের অশুভ প্রভাব কমাতে বৃষ লগ্নের জাতক-জাতিকার কোন কোন গ্রহের পূজা ও মন্ত্র জপ করা উচিত?

​ডিসক্লেইমার

  • ​এই নিবন্ধটি জ্যোতিষশাস্ত্রের একটি সাধারণ ধারণা মাত্র।
  • ​এখানে দেওয়া ফলগুলি ব্যক্তির জন্মকুণ্ডলী অনুযায়ী আলাদা হতে পারে।
  • ​শুধুমাত্র এই লেখার উপর ভিত্তি করে কোনো বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
  • ​ব্যক্তিগত পরামর্শের জন্য একজন অভিজ্ঞ জ্যোতিষীর সাহায্য নেওয়া উচিত।
  • ​যেকোনো সিদ্ধান্তের জন্য পাঠক নিজেই দায়ী থাকবেন।